প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের সাথে টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন (Only Boys) Join Now!

অপু-০২: বৃষ্টির স্মৃতি

বৃষ্টির স্মৃতি কয়েক ঘণ্টা যাবৎ মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। না কমছে, না বাড়ছে। বৃষ্টির জন্য কেউ ছুটাছুটি করে ছাদ থেকে আর গ্রামের উঠোন থেকে কাপড় তুলছে। কেউ আবার পানিতে না ভেজার জন্য মাথায় ছাতা দিয়ে হাঁটছে। কেউ আবার একটা কচুপাতার উপর নির্ভর করছে। আবার কেউ তার অতিপ্রিয় বইটা মাথায় দিয়ে বৃষ্টির পানি থেকে মাথা আড়াল করার চেষ্টা করছে। যারা কোনো ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে আছে, তারা ভিজতে থাকা মানুষগুলোকে দেখে ঠাট্টা-মশকরা করছে। কেউ মোবাইলের সাহায্যে জানাচ্ছে—সে যেতে পারবে না, তার খবর পরিবার-পরিজনকে দিচ্ছে।

চতুর্দিকের মানুষ ব্যস্ত। শুধু ব্যস্ত নেই অপু। সে ব্যস্ত থাকবেই বা কী করে? সে তো জানালার ধারে বসে পানি পড়া দেখছে। পানি পড়ছে। এটা আবার দেখার কী হলো? অপুকে যদিওবা দেখলে মনে হবে সে পানি পড়া দেখছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে পানি পড়া দেখছে না। সে তার কল্পনার চোখ দিয়ে তার অতীত দেখছে। আসলে এই কথাটি হয়তো সঠিক—যা যায় ভালো, যা আসে খারাপ।

একটি ফাঁকা মাঠ। পানিতে ভিজছে। ভিজছে কাবাডি কোর্টটাও। ভিজছে ভলিবল খেলার অংশ। ভিজছে প্রাত্যহিক সমাবেশের অংশটা। ভিজছে বড়ই গাছ থাকার অংশটি। পুকুরে পানি পড়ছে, অনেক সুন্দর লাগছে। বিষয়গুলো অতি স্বাভাবিক।

বেশিদিন নয়। মাত্র এক বছর আগে এই কাবাডি কোর্টে টেনিস বল দিয়ে ফুটবল খেলছিল অপু। অন্যান্য খেলোয়াড়দের মতো সেও বিদ্যালয়ের পোশাক পরিধানরত অবস্থায়। শুধু পার্থক্যটা হচ্ছে, অন্যদের পোশাকে কারও বুকের বোতাম খোলা, কারও পোশাকের রং ফ্যাকাশে, কারও কারও চুলে নকশা করে কাটা। শুধু অপুর মাথার চুল অথবা কোনো কান বা কোনো কিছুতেই তার অনিয়ম নেই। একদম বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সে সবকিছু রেখেছে। তাই অনেক দূর, এমনকি বিদ্যালয়ের ৩য় তলা থেকেও তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে যে ওটা অপু।

স্বভাবতই জেতা সকলের নেশা। সেটাকে বিষয়বস্তু হিসেবে নিয়ে সকলেই খেলে। অপু আবার তার থেকে বাদ যাবে কেন? সেও জেতার জন্য খেলছে। শুধু কাবাডি কোর্টে নয়, ভলিবলের মাঠেও ছোট টেনিস বল দিয়ে অপুরা খেলে। এত বড় মাঠ! তাই অল্পতেই হাপিয়ে যাওয়া কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তবে একটু বেশি হাপিয়ে যায় অপু। এটা তার একটা বড় সমস্যা। তার দম অত্যন্ত কম। তবে সে ১–২ মিনিটে যা করতে পারে, তা অন্য কেউ আধা ঘণ্টায়ও করতে পারে না। বৃত্ত করে ঘেরা। পড়ে গেলে ষাঁড়ের মতো কিছু মনে না করে ঘুরতে ঘুরতে উঠে দাঁড়ানো—এই রকম আরও কত কী! যাকে ফাউল হিসেবে ধরা হয় না। তার দম বেশি হলে কী যে হতো?

তাদের মাঠের পূর্ব দিকে আছে একটা পুকুর। এই পুকুরের পাশে অপু আর তার বন্ধুরা মিলে গল্প করতো। কত ধরণের গল্প! কিছু সত্যি সত্যি, কিছু মিথ্যা। কেউ মিথ্যা বলছে বুঝতে পারলেও কষ্ট পাবে বলে ধরিয়ে দিত না। পুকুরের পাশে আছে একটা রাস্তা। তার পাশে কিছু গাছ। এই গাছগুলো প্রাকৃতিকভাবে কাবাডি খেলার কোর্ট বানিয়ে রেখেছে। মাঝে একটা দাগ দিলে কাবাডি খেলা যায়। অপু কত যে এখানে কাবাডি খেলত! বেশিরভাগ সময় নিজের প্রিয় বন্ধুদের বিপক্ষে। খেলার সময় কী না হয়! কোনো একটা শক্তিশালী কিন্তু শুকনো দেহের অধিকারী ব্যক্তিকে দলের নেতা ভেবে খেলা হতো। সবাই তো শুকনো—দেখে মনে হয় হাসপাতালের কঙ্কালের সেট এনে রাখা হয়েছে। খেলা হতো যতটা জেতার জন্য, তার চেয়ে বেশি উপভোগ করত। খেলোয়াড়দের মধ্যে কেউ আবার নিষ্ক্রিয় খেলোয়াড় হিসেবে খেলত। এই কোর্টের এক প্রান্তে একটা গাছ ছিল, যা অন্যান্য গাছের চেয়ে বাঁকা। এটাতেও খেলা হতো। এর বিপরীত দিকে আরও ৩টা গাছ ছিল, যার দুটোকে গোলবার ধরে অপু আর তার ৩ বন্ধু ফুটবল খেলত। এর ঠিক বিপরীত দিকে একটা মরা নদীর পাশে ছিল একটা বড়ই গাছ। প্রতিদিন হাঁটতে হাঁটতে কতবার যে এটা চক্কর দেওয়া হতো, তার হিসাব থাকত না। এখন আর নেই সেই বড়ই গাছ। ঝড়ে ভেঙে গেছে।

কখনো দেখা যেত বিদ্যালয়ের প্রধান ভবনের ৩ তলায় অপু আর তার বন্ধুরা ঠাট্টা-মশকরা করছে। দেখছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গতিবিধি। স্কুল মাঠে তো চক্কর দিতেই। তার মাঝে ক্রীড়া শিক্ষকের বাঁশির শব্দ শুনে দৌড়ে চলে আসত প্রাত্যহিক সমাবেশের স্থানে। তখন…

এসব ভাবার সময় কে যেন অপুকে ডাক দিল, আর অপু চোখ মুছতে মুছতে সেদিকে চলে গেল…
গল্পের তথ্য গল্পের নাম : বৃষ্টির স্মৃতি
ধরণ : স্মৃতিচারণ
সংগ্রহ : অপু সিরিজ ছোটগল্প
লেখক : নাঈমুর রহমান
বি:দ্র: এই গল্পগুলো ২০১৭ সালের দিকে লেখা। তাই, এখানে তথ্যগত কোনো ভুল থাকলে আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

মন্তব্য করুন

টেলিগ্রাম ভিত্তিক কমেন্ট সিস্টেম

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.