প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের সাথে টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন (Only Boys) Join Now!

অপু-০৩: পথশিশু অপু

বৃষ্টির স্মৃতি যার থাকা-খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, তার আবার অন্য কী বিষয় নিয়ে চিন্তা আছে? থাকার জন্য কত জায়গা আছে! দোকানের উঠান, কাজ চলছে এমন বাড়ি, পড়ে থাকা ট্রাক বা অন্য কিছু আছে—এগুলোতে পথের কুকুরের পাশে পাশাপাশি আরামে শোয়া যায়।

খাবার নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। বিনামূল্যে পাওয়া যায় পানি। এ ছাড়া হোটেলের পাশে পড়ে থাকে কত পঁচাবাশি খাবার, ডাস্টবিনে পড়ে থাকে বড়লোকদের ফেলে দেওয়া কত ভালো ভালো খাবার। কুকুরের আগে দেখতে পেলে পেটপুরে খাওয়া যায়। আর ভালো কিছু পেতে চাইলে, ক্ষুধার্থ ফকিরের ন্যায় সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরলে—একজন হলেও দেয়। খাতির-যত্ন নেই, তবুও মন্দ নয়। খাওয়া হলেই হলো।

কখনো কখনো খাবারের জন্য কত অপমান-মার সহ্য করতে হয়েছে অপুকে—তার তো হিসেবই নেই। তার মতো অন্য ছেলেরা নেশা করলেও, সে নেশা করে না। কত ভদ্রতা! তার মতো আরও অনেক পথশিশু আছে, যারা তার মতো দিন কাটায়। কয়েকজনের সাথে তার আবার বেশ ভালো সম্পর্ক। খুব ভালো একটা বন্ধুত্বও হয়ে গেছে। খাবার একসাথে ভাগ করে খায়।

এরা ছাড়া অন্য কারো—এমনকি তাদেরও সাথে—অপুর কখনো ঝগড়া বা মারামারি হয়নি। উল্টো, খুব ধৈর্য ধরে অপু ঝগড়া থামাতো। মারামারি শুরু হলে অপু নিজেই সব মার সহ্য করত। প্রয়োজনে সবসময় ক্ষমা চেয়ে ঝগড়া-মারামারি থামাতো। তার সামনে কেউ কখনো মারামারি করেছে, এমন কোনো ইতিহাস নেই। খুব ধৈর্য তার।

তবে, অপু জন্ম থেকেই এখানে আছে—এমন নয়!

মাত্র ৫ বছর আগের কথা। অপু তার বাবা-মার সাথে থাকত। তার বাবার চাকরি সূত্র এবং পড়াশোনার সূত্রে তারা শহরে থাকতো। তার একটা বোনও ছিল। যদিও তার বাবা খুব বেশি বেতন পেতেন না, তবুও টেনেটুনে তাদের দিন ভালোই যেত। তাদের গ্রামেও বাড়ি ছিল। কয়েক মাস পর পর সেখানে যেত। তার বাবা ঘুষ বা কোনো অন্যায় কাজ করতেন না। তাই তাদের কোনো ঝামেলা ছিল না।

অপুর একটা বড় দোষ ছিল। সে অল্পতেই রেগে যেত আর হৃদয়ে আঘাত করার মতো কথা বলত। এটি বললে যারা শুনত, তারা যতটা কষ্ট পেত, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেত সে নিজেই। কত কেঁদেছে (লুকিয়ে), নিজে নিজেকে গালমন্দ করেছে, কিন্তু তার রাগ বিন্দুমাত্র কমতো না—বরং এর শক্তি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

একদিন সে রাগের জন্য গভীর রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে ট্রেন স্টেশনে গিয়ে ট্রেন পাল্টে পাল্টে এই শহরে এসেছে। সে জানত না, কোথায় যাচ্ছে, কেনো যাচ্ছে। শুধু একটা ক্ষীণ আশা—যদি এর মাধ্যমে তার সেই রাগের নির্মূল হয়। অল্প বয়স, তখন তাই বোঝেনি, কত বড় ভুল পথে এসেছে! হয়তো ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছে। আজ তাই হয়তো তার এত ধৈর্য।

বাবা-মা হয়তো তাকে অনেক খুঁজেছে। পুলিশের কাছেও হয়তো বছরের পর বছর ঘুরেছে। কিন্তু সে এমন পথে, এমন অবস্থায় থাকত, যার জন্যে হয়তো কোনোভাবেই খুঁজে পায়নি। বাচ্চা মানুষের জেদ—এত কিছুর পরেও বাড়ি যায়নি।

সে আজ এত বড় ধৈর্য সহকারে সবকিছু করেছে, যা তার জানা মতে কেউ কখনও করেনি। সে জানল কীভাবে? আগেই তো বলেছি, সে ওই বয়স অনুসারে ভালোই শিক্ষিত ছিল। এই শহরে এসে সে সরকারি লাইব্রেরিতে বই আর পত্রিকা পড়ত। সে বাড়ি যাওয়ার টিকিটের টাকা বহু আগে দোকানে, এখানে সেখানে কাজ করে জোগাড় করে রেখেছিল। সে খুব ভালো অঙ্ক পারত, তো তাই বিভিন্ন হিসাব-নিকাশের কাজে তাকে রাখলে কখনও কোনোদিনও হিসাবে গণ্ডগোল হতো না। তাই, যারা তাকে কাজ দিত, তারা বরং তার উপর খুশিই হতো।

এত বছর পর আজ সেই দিন, যার জন্য সে এতটা বছর অপেক্ষা করেছে। বাবা-মা ছাড়া এতটা কষ্ট করে নিজে বাঁচা শিখেছে। সকলের কাছে বিদায় নিয়ে প্রথম দিনের জামা, যা এতদিন যত্ন করে রেখেছিল, সেটা পরে সে বাসে চড়ে। অনেক খুশি সে। বাস অনেকক্ষণ আগেই রওনা দিয়েছে। চলন্ত বাসের সামনে হঠাৎ কী যেন একটা.....
গল্পের তথ্য গল্পের নাম : পথশিশু অপু
ধরণ : সাধারণ
সংগ্রহ : অপু সিরিজ ছোটগল্প
লেখক : নাঈমুর রহমান
বি:দ্র: এই গল্পগুলো ২০১৭ সালের দিকে লেখা। তাই, এখানে তথ্যগত কোনো ভুল থাকলে আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

মন্তব্য করুন

টেলিগ্রাম ভিত্তিক কমেন্ট সিস্টেম

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.