
বিষয়টা বিরক্তিকর। একজন সাধারণ রক্তে-মাংসে গঠিত ব্যক্তি, যে কিনা আমাদের মতোই—তাকে নাকি দেখার জন্য অনেক ঝামেলা করতে হবে! যে কিনা সাধারণ একটা টাইম মেশিন বানিয়েছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটাই অনেক।
সাল ২০৯৯। পৃথিবীর সকল দেশই অনেক উন্নত। বাংলাদেশও পুরোপুরি পিছিয়ে নেই। তবে অন্যান্য দেশের মতো অতোটাও উন্নত নয়। আমেরিকা-জাপানের তো মানুষের হাঁটাচলা করার প্রচলন হারিয়েই গেছে। এই সময় জন্মানো বাচ্চা-কাচ্চারা জানেই না হাঁটা কী? অধিকাংশ মানুষ ফ্লাইং কারে চলাচল করে। সবকিছুই যন্ত্রনির্ভর। ফকিরেরাও অবধি ফ্লাইং কারে চড়ে ভিক্ষা করে। রোবট তো জায়গায় জায়গায় পড়ে আছে। মানুষ আর কত নিবে? কেউ রোবট কুড়িয়ে নিলে তাকে ফকির-ফকির বলে খ্যাপানো হয়। এই দিক দিয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের মানুষ হাঁটাচলা করে। খাবারের কথা কী আর বলব! আসল আলু-পটলের চেহারা সবাই ভুলে গেছে। সবাই এক প্রকার ক্যাপসুলের সাহায্যে খাবার খায়। যে খাবার খেতে চায়, বাজার থেকে তারা ক্যাপসুল কিনে আনে। খাবার খাওয়ার জন্য ক্যাপসুল চিবাতেও হয় না। মুখে দিলেই গলে যায়। তারপর পাওয়া যায় আসল স্বাদ।
আদিযুগে যখন মানুষ ভ্যান-রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো, এখনও এদেশে এর প্রচলন আছে। শুধু আগে ভ্যান-রিকশা ছিলো আর এখন স্পেসশিপ। সবগুলোই চীনে তৈরি। বাংলাদেশ তৈরির অনুমতি পায় না।
অপু যা তৈরি করেছে, তা যদিওবা অন্যান্য দেশের থেকে কম, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য বিরাট সাফল্য। বাংলার কোনো মানুষ টাইম মেশিন বানানোর সাহস করে নি। সে সাহস করে এগিয়ে গেছে। তাই তাকে নিয়ে এতো হইচই। কিন্তু "যন্ত্রটা কাজ করে?"—এই নিয়ে অনেক কথাবার্তা চলছে। বিদেশি বিজ্ঞানীরা এটা মেনেই নিতে পারছে না। তাদের মতে, এটা আগে তাদের কেউ বানিয়েছিলো। অপু শুধু তার কপি করেছে। এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে অন্য দেশের মন্ত্রিদের কথা চলছে। যন্ত্রটা চলে কী না—তার পক্ষে অথবা বিপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কেউ যন্ত্রে চড়ে অতীতে কিংবা ভবিষ্যতে যেতে চাচ্ছে না, এমনকি অপুও না। তবে হিসাব-নিকাশ বলছে কাজ করবে। তার বন্ধুবান্ধব, যারা তাকে অবজ্ঞা করতো, তারা এখন অপুর কাছে ক্ষমা চাচ্ছে। তারা সর্বদা তাকে ‘পাগল-পাগল’ বলে তার রাগ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতো। তবে অপু রাগ করুক আর নাই করুক, তাতে কারও কিছু যায় আসে না। কারণ, অপুর না ছিল টাকা-পয়সা, না ছিল ক্ষমতা। তবে তার একটা বন্ধু অনেক ধনী। সে মানুষ হিসেবেও অনেক ভালো। অপুকে এই যন্ত্রটা বানাতে যত টাকা লাগবে, সে সব টাকা দিয়েছে। অপু অনেক দেশের মানুষের (বিজ্ঞানীদের) সাথে সম্মিলন করেছে। হিসাবের ভুল কেউই ধরতে পারছে না। কিন্তু তবুও সবার এত সন্দেহ। সম্ভবত আজকেই অপুর শেষ দিন। আজ সকাল থেকে অপুকে পাওয়া যাচ্ছে না। সাথে পাওয়া যাচ্ছে না টাইম মেশিনটা.....
গল্পের তথ্য
গল্পের নাম : অপুর টাইম মেশিন
ধরণ : সায়েন্স ফিকশন
সংগ্রহ : অপু সিরিজ ছোটগল্প
লেখক : নাঈমুর রহমান
বি:দ্র:
এই গল্পগুলো ২০১৭ সালের দিকে লেখা। তাই, এখানে তথ্যগত কোনো ভুল থাকলে আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।