প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের সাথে টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন (Only Boys) Join Now!

অপু-০৮: লেখক অপু

লেখক অপু আমাদের দেশে অনেক লেখক আছে, কিন্তু সবাই খ্যাতি পায় না। অপুও এমনই এক লেখক। সে সবসময়ই লিখতে ভালোবাসত, কিন্তু তার লেখা কখনো কারো সামনে প্রকাশ করত না। কারণ ছিল একদিকে লজ্জা, অন্যদিকে ভয়। তার গল্পগুলোতে অনেক সময় বিদ্রোহী ভাব ফুটে উঠত। যদি কখনো এসব লেখা কারো হাতে পড়ে যায়, তাহলে কী হবে বলা কঠিন। তাই সে তার লেখাগুলো গোপনে নিজের একটি খাতায় জমা করে রাখত। তবে, ভাগে কার কি আছে, তা কল্পনা করাও অসম্ভব।

একদিন ক্লাসের সময় খবর এলো, স্যার আসবেন না। সবাই খুশিতে ফেটে পড়ল। অপু অবশ্য তেমন খুশি হয়নি। সে মনে করত, যত রাগি স্যার, তত জ্ঞানী। বই বের করতে গিয়ে তার হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেল সেই বিশেষ খাতাটা। এটা কোনো পড়াশোনার খাতা নয়, বরং তার লেখা গল্পে ভরা খাতা।

অপু খেয়াল করল না, কিন্তু তার এক বন্ধু নিচ থেকে কলম তুলতে গিয়ে খাতাটা দেখতে পায়। সে জানত এটা অপু আর সে এই খাতাটা কাউকে কখনো দেখায় না। এরপর কৌতুহলবসত খাতাটা তুলে নেয়। এরপর, পিছনে গিয়ে গোপনে খাতাটা পড়া শুরু করে একদম হতবাক।

এত সুন্দর লেখাগুলো অপু লিখেছে! বন্ধুর মনে হলো, এটাই সুযোগ অপুকে জনপ্রিয় করার। কারণ, অপু পড়াশোনায় ভালো হলেও রেজাল্টে পিছিয়ে থাকে। যে খারণে তাকে তেমন কেউ চেনে না। কিন্তু, সে পরিচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এছাড়া তাকে অপু বিভিন্ন সময় অনেকভাবে উপকার করেছে কিন্তু কখনই কিছু দাবি করে নি। সে কোনোদিন তার এই উপকারের প্রতিদানও দিতে পারে নি। আজ সুযোগ হঠাৎ করে যখন এসেছে, কাজে লাগাতে হবেই!

অন্যদিকে, অপু বাড়ি গিয়ে দেখে, খাতাটা নেই। তন্নতন্ন করে খুঁজেও পেল না। মন খারাপ হয়ে গেল। রাতভর অস্থির হয়ে থাকল। কিন্তু পরদিন স্কুলে গিয়ে দেখে খাতাটা দিপকের হাতে! দিপক এমন এক ছেলে, যে যে কোনো খবর ছড়িয়ে দিতে ওস্তাদ।

অল্প সময়েই গল্পগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ক্লাসের সবাই মুগ্ধ। কেউ সরাসরি, কেউ ফটোকপি করে অন্য ক্লাসেও দেয়। শিক্ষকরা পর্যন্ত পড়ে অবাক! তারপর গল্পগুলো পত্রিকায় ছাপা হতে শুরু করে। এমনকি ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে বিদেশি পত্রিকাতেও যায়। অপু কিছু না বুঝতেই জনপ্রিয় লেখক হয়ে যায়।

সকলের অনুরোধে অপু নতুন নতুন গল্প লিখতে শুরু করে। প্রকাশকরা তার লেখা ছাপতে ভিড় জমায়। শর্ত দেয়, একবার যে লেখা এক প্রকাশককে দেওয়া হবে, তা আরেকজনকে দেওয়া যাবে না। তার লেখা এত জনপ্রিয় হলো যে এক প্রকাশনা তার নামে সিরিজ চালু করে। এমনকি লাইব্রেরিও খোলে। অপুর খাতা হয়ে ওঠে তার ভাগ্যের চাবিকাঠি।

একদিন অপু সখ করে “সরকার না” নাম দিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখে ফেলে। এখানে সে অনেক খুটিনাটি ব্যাপারগুলোও যুক্ত করলো। পান্ডুলিপী সম্পাদকের কাছে পাঠানোর পরে সম্পাদকও তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপাল। পাঠকেরা দারুণ সাড়া দিল।

এক রাতে অপু তার টেবিলে বসে তার পরবর্তী প্রবন্ধ লিখছে। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলতে দেখতে পেলো কয়েকজন অচেনা লোক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা জোর করে অপুকে তুলে নিয়ে গেল।

জ্ঞান ফেরার পর সে নিজেকে এক কাঁচের ঘরে বন্দি অবস্থায় দেখতে পেল। সামনে কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের কথা সোজাসাপ্টা, “তুমি যে প্রবন্ধ লিখেছ, কালই সেটা কাল্পনিক ঘোষণা করতে হবে।”

অপু শান্ত গলায় বলল, “না। আমি যা লিখেছি, তা একেবারেই সত্য।”

নেতারা তাকে ভয় দেখাতে একটি ভিডিও চালাল। সেখানে দেখা গেল তার বাড়িতে থাকা অপ্রাকিশত লেখাগুলোর পান্ডুলিপী পানিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তারা বলল, “যদি বাঁচতে চাও, সত্য ঢেকে দাও। নইলে খাতাও হারাবে, জীবনও।”

অপু স্থির হয়ে উত্তর দিল, “পান্ডুলিপী যদি যায়, যাক। কিন্তু সত্যকে আমি হারাতে দেব না।”

সে জানত, মৃত্যুই তার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু অন্তরের গভীরে অনুভব করল, তার খাতা হয়তো ডুবে যাচ্ছে, কিন্তু তার লেখা ডুববে না। সত্যও ডুবে যাবে না।

অপু মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হলো। আর অন্যদিকে তার খাতা পানিতে ভেসে চলল… যে খাতাগুলো তাকে এত খ্যাতি দিয়েছিল, আর সেই খাতাই হয়ে উঠল মৃত্যুর কারণ। কিন্তু আসলে খাতা নয়, কলমও নয়, আসল কারণ ছিল "সত্য"....
গল্পের তথ্য গল্পের নাম : লেখক অপু
ধরণ : সাধারণ
সংগ্রহ : অপু সিরিজ ছোটগল্প
লেখক : নাঈমুর রহমান
বি:দ্র: এই গল্পগুলো ২০১৭ সালের দিকে লেখা। তাই, এখানে তথ্যগত কোনো ভুল থাকলে আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

মন্তব্য করুন

টেলিগ্রাম ভিত্তিক কমেন্ট সিস্টেম

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.