
– অনেক তো ভাবলে। কিছু কী পেলে?
– না।
– তাহলে এতো ভাবো কেন?
– ভালো লাগে, তাই।
– শুধু ভালো লাগা নিয়ে থাকলে কী হবে? তোমার কী কোনো ভবিষ্যৎ আছে? নাকি আবার নেই?
– বেঁচে থাকলে অবশ্যই আছে।
– তাহলে পড়াশোনা করছো না কেন?
– একটুও ভালো লাগে না।
– পড়াশোনা কেউ পছন্দ করে না, কারো ভালো লাগে না, কেউ পছন্দ করে না। তাই বলে কেউ কী পড়া বাদ দিয়েছে? অনেক তো বিজ্ঞানীদের জীবনী পড়েছো। দেখেছো, তারা কত কষ্ট করে পড়েছেন।
– কষ্টে সব বিষয়ই ভালো লাগে।
– (রেগে) তাহলে আরামে পড়া বাদ দাও। চুলার উপর বসে পড়ো, পড়া হবে।
– (বিনয়ের সাথে) না, আমি এটা বলতে চাইনি!
– তাহলে কী বলতে চাচ্ছো? বলতে চাচ্ছ যে পড়াশোনা বাদ দিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ বাদ দিবে? মৃত্যু যদি না হয় তবে একদিন তুমি বড় হবে। তখন তুমি কী চাও—রাস্তায় রাস্তায় ময়লা সাফ করবে?
– না।
– তবে ভেবে দেখো। তুমি যে এত ভাবো তাতে কোনো লাভ নেই। এর চেয়ে বরং পড়াশোনা করতে পারো।
– কিন্তু পড়াশোনা যে আমার ভালো লাগে না।
– ভালো লাগবে না কেন? ভালো লাগাতে হবে। আরামে ভালো লাগে না তো কষ্টে পড়ো।
– তাহলে চুলার উপর পড়বো?
– না না! সেটা নয়।
– তাহলে?
– নিজেকে হালকা কষ্ট দিয়ে পড়তে পারো। তবে এমন কষ্ট দিও না, যা তুমি সহ্য করতে পারবে না।
– যেমন?
– গরমের দিন ফ্যান বন্ধ করে পড়বে।
– ধ্যাত! গরমের দিন আবার ফ্যান বন্ধ করে থাকতে পারবো নাকি?
– হ্যাঁ। এটাই কৌশল। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “ঠেলায় বেড়াল গাছে ওঠে”। এটার বাস্তবিক প্রয়োগ হবে এখানে। গরমের কারণে ২ ঘন্টার পড়া তুমি ২ মিনিটে শেষ করতে পারবে।
– ও! ঠিক তো। আগে ভাবিনি!
– কীভাবে ভাববে? তুমি তো অন্য কথা ভাবো, যা তোমার এখন না ভাবলেও চলবে। নিউটনের ভুল এখন না খুঁজে ভালোভাবে সূত্রগুলো ব্যাখ্যা করা শেখো। তোমার বের করা ভুল কেউ দেখবে না।
– (লজ্জিত)
– শোনো, তাই বলছি—অযথা চিন্তা বাদ দিয়ে বরং কাজের কথা চিন্তা করো।
– ঠিক আছে।
এতক্ষণ কথাগুলো অপু আর তার বিবেক বলছিলো।
যখন কেউ কোনো ভুল করে, বাহ্যিকভাবে তা হয়তো তার চোখে পড়ে না; কিন্তু সেটা ঠিক হয়নি কিংবা হওয়া উচিত ছিল—এরকম হলে, তখন যে কারোই অন্তরের বিবেক কখনো কখনো খুলে যায়। যেন কথা বলতে শুরু করে নিজেই নিজের সাথে, ঠিক যেন সিনেমায় যমজ মানুষ বের হয়।
চিন্তা করছে আর অপু রাস্তায় হাঁটছে।
সে অবশেষে ঠিক করলো, পড়াশোনা করবে।
হঠাৎ, সে মাথা তুলে দেখে—প্রচণ্ড গতিতে তার দিকে ধেয়ে আসছে একটা ট্রাক!
পা অন্যদিকে ঘোরার অনুমতি চাচ্ছে, কিন্তু……
গল্পের তথ্য
গল্পের নাম : অপুর চিন্তা
ধরণ : মনস্তাত্ত্বিক
সংগ্রহ : অপু সিরিজ ছোটগল্প
লেখক : নাঈমুর রহমান
বি:দ্র:
এই গল্পগুলো ২০১৭ সালের দিকে লেখা। তাই, এখানে তথ্যগত কোনো ভুল থাকলে আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।