
হঠাৎ করে চোখ পড়লো C:/ ড্রাইভের দিকে। কখনো সে এটা চেক করেনি। কিন্তু আজ সে ঠিক করলো চেক করে দেখবেই। যা হওয়ার হবে। আগে ভয় পেতো, যদি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যায়! আজ প্রথমবারের মতো অপু প্রথমে C:/ ড্রাইভ ওপেন করলো। কিন্তু কই? কিছুই তো হলো না। বরং সুন্দরভাবে সব ফাইল চলে এলো।
সব ফাইল এক এক করে চেক করতে করতে সে চলে গেলো Windows 8 ফোল্ডারে। তখন তার মনে পড়লো তার সিস্টেম Windows 8-এ আপগ্রেড করার সময় যে CD কিনেছিল, সেটা তার কাছে আছে। এই ফাইলগুলো দেখে তার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো। সঙ্গে সঙ্গে সে ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে গুগল ইমেজ থেকে Windows 8-এর লোগো সম্বলিত একটি ছবি ডাউনলোড করলো। তবে সেই ছবিতে Windows 8 লেখা ছিল না, শুধু উইন্ডোজের লোগোটি ছিল।
এবার নেট কানেকশন বন্ধ করে একটি সাধারণ এডিটর সফটওয়্যার দিয়ে ছবিটিতে Windows 8-এর জায়গায় লিখলো “Opu 8”। ফলে তার কাছে দুটি ফাইল থাকলো। একটি "Windows 8" আরেকটি "Opu 8"। দুটো পাশাপাশি রেখে সে কপি করতে করতে এডিট চালিয়ে গেলো। যেমন: Windows 8-এর জায়গায় লিখলো Opu 8, Microsoft Excel-এর জায়গায় লিখলো Opu Excel। এভাবে পুরো সিস্টেমের প্রধান ফাইলগুলো সে নিজের নামে সাজিয়ে নিলো। এমনকি নিজের পছন্দের কিছু গেম ও সফটওয়্যারের কোডও যোগ করলো।
ফাইল দুটি মিলিয়ে দেখে নিলো, কোনো পার্থক্য আছে কিনা। এরপর, যেভাবে Windows 8 ইনস্টল করতে হয়, সেভাবেই সে নিজের এডিট করা সফটওয়্যারটি ইনস্টল করলো। অবাক হয়ে দেখলো, কোনো ঝামেলা ছাড়াই ইনস্টল হয়ে গেলো! এবার সতর্কতার সাথে কম্পিউটার বন্ধ করে সে বাইরে ঘুরতে গেলো।
প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা পর ফিরে এসে আবার চালু করলো কম্পিউটার। সাধারণ নিয়মে কম্পিউটারটি কোনো ঝামেলা ছাড়াই চালু হয়ে গেলো। মজার বিষয়, সবকিছু তার মনের মতো আর নিজের নামে সাজানো! সে এই ফাইলটি একটি CD-তে কপি করে রাখলো। পরদিন শনিবার, স্কুল খোলার দিন। অপু দ্রুত রেডি হয়ে স্কুলে গেলো। ভীষণ খুশি লাগছিল তার। তবে ব্যাপারটি কাউকে আর জানালো না।
ক্লাসে তখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি চলছে। অনেকদিন পর স্কুল খোলায় স্যার আজকে পড়ানোর পরিবর্তে গল্প করছিলেন।
তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, “কে কোন উইন্ডোজের ভার্সন ব্যবহার করছো? আমি Windows 8 ব্যবহার করি।”
কেউ বললো 4, কেউ বললো 7, কেউ বললো XP।
ক্লাস তেমনভাবে না চলায় অপু আর তার বন্ধু নিজেদের মধ্যে গল্প করছিল। অপু মজা করে বললো, “আমি এখন Opu 8 চালাচ্ছি।”
এটা শুনে তার বন্ধু অবাক হয়ে বললো, “কিরে! পাগল হয়েছিস নাকি? তোর নামে আবার কিছু আছে নাকি?”
অপু হেসে বললো, “না, তবে আমি নিজে রেডি করেছি।”
বন্ধু অবাক হয়ে বললো, “কি! সিরিয়াসলি?”
অপু বললো, “হ্যাঁ, তবে আস্তে বলিস। আজকে বিকেলে আমার বাসায় আয়, সব দেখাবো।”
বিকেলে তার বন্ধু অপুর বাড়িতে এলো। অপু ব্যাপারটা তাকে গোপন রাখতে বললো। কারণ, তার এসব সবাইকে জানাতে ভালো লাগে না। নিজে বানিয়েছে নিজের জন্য। এটা সবাইকে জানানোর কি আছে?
যখন অপু কম্পিউটার চালু করে বন্ধুকে দেখালো, তখন বন্ধুর তো চোখ কপালে!
“এ কী দেখছি! Opu 8? বাহ! এত সুন্দর জিনিসটা তুই বানিয়েছিস? আমাকে একটা কপি দে।”
অপু বললো, “এই নে, Opu 8-এর CD। এমনিই রেখে দিয়েছিলাম।”
বন্ধু খুশিতে বললো, “অসাধারণ! সাথে নতুন গেমগুলোও দারুণ!”
অপু বললো, “চেষ্টা করছি আরকি। স্পেশাল কিছু না।”
বন্ধু বললো, “না, তবুও অনেক ভালো হয়েছে।”
কিছুদিন পর, অপুর বন্ধু তাকে না জানিয়ে Opu 8-এর কপি অন্যদের দিতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে সফটওয়্যারটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলো। কিন্তু, অপু কিছুই জানতো না।
একদিন বিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষক তাকে একটি বন্ধুর কাছে কাজের জন্য পাঠালেন। অপু যখন সেখানে গেলো, বন্ধুর কম্পিউটার চালু হতেই তার চোখ কপালে উঠে গেলো। এটা তো তার বানানো প্রোগ্রাম! সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এই সফটওয়্যারটা তুই কোথায় পেলি?”
বন্ধু বললো, “NOYON Telecom থেকে এনেছি। দারুণ না?”
অপু কিছুই বললো না। ভেতরে ভেতরে সে খুশি হলেও পাশাপাশি অবাক হলো। দ্রুত কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে নিজের কম্পিউটার চালু করলো। কিন্তু এবার তার কম্পিউটার আর চালু হলো না। একটু পর উইন্ডোজের জাতীয় “ব্লু স্ক্রিন” আসলো।
অপু গালে হাত দিয়ে বসে ভাবতে লাগলো।
“বাগ নাকি?”...